অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হওয়ায় বাবা চেয়েছিলেন আমি যেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করি। প্রযুক্তির প্রতি অতি ঝোকঁ থাকায় বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে পারিনি আলাপচারিতায় এমনটিই জানাচ্ছিলেন দেশের পরিচিত মুখ ফ্রিল্যান্সার নাসিম। ফ্রিল্যান্সিং জগতে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন অল্প বয়সে, এই তরুণ ঘরে বসে নিজে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শেখাচ্ছেন সব বয়সী মানুষদের।
নাসিম বলেন, তথ্য প্রযুক্তি প্রতি আগ্রহী হয়ে ব্লগ ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব টিউটোরিয়ালগুলির মাধ্যমে কয়েকটি প্রোগ্রামিং ভাষা এবং ওয়েব সাইট ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলোপমেন্ট শিখি। স্কুলে পড়ার সময় ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং জগতে কাজ শুরু করি। ২০১৬ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্য বাবাকে হারানোর পর পরিবারকে চালানোর জন্য একমাত্র ভরসা ছিলাম আমি। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যাওয়ার পর পারিবারিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত অভাবি। তখন ভালো কোনো চাকুরির বয়সও ছিল না। অভাবের সংসারে ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনোযোগ দিয়ে আমি ঘুরে দাড়িঁয়েছি, কষ্ট করে সফল হয়েছি। ২০১৬ সালে ফ্রিল্যান্সার ডট কমে সেরা ১০ এর তালিকায় আমার নাম আসে।
নাসিম এখন ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রিল্যান্সার নাসিম হিসাবে সুপরিচিত। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে চালাচ্ছেন সফটওয়্যার ডেভেলপিং কোম্পানি এফ এন সফটওয়্যারস এন্ড ইনস্টিটিউট। ২০১৩ সালে নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট কোম্পানি (এফ এন সফটওয়্যারস এন্ড ইনস্টিটিউট) শুরু করেছিলেন তবে এটি অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৮ সালে।
ফ্রিল্যান্সার নাসিম বলেন, যারা সমালোচনা করে তাদের কাছে আমার সফলতাটাই বড় জবাব। এমনও মানুষ আছে ফেসবুকে ৫ বছর ধরে আমার সমালোচনা করে, এই ৫ বছরে আমার অনেক পরিবর্তন হলেও তার কোনো পরিবর্তন হয়নি, না তার শব্দের পরিবর্তন হয়েছে না তার নিজের। যারা সমালোচনা করে তাদের শক্তিশালী কোনো স্বপ্ন নেই। যাদের স্বপ্ন আছে তারা কখনো সমালোচনা করে না ।
দেশের তরুণ সামাজ নিয়ে আপনার ভাবনা কী? তাদের এগিয়ে নিতে আপনার পরিকল্পনা কি? জানতে চাইলে নাসিম বলেন,
দেশের প্রযুক্তিখাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে ব্যর্থতা আমাদের তরুণ সমাজের, আমরা সেটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। দেশ শুধু ডিজিটাল হলে হবে না, আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের ডিজিটাল হতে হাবে। আমার স্কুল, কলেজ ও ছোটবেলার বন্ধুদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিন বলেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দেশিও কোম্পানির বিজ্ঞাপন নিয়ে দেশের অনেক অর্থ বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের দেশিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চিন্তা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের কথা আমাকে ভাবায়, আমি যেহেতু একজন ফ্রিল্যান্সার আমার কাজ হলো বিদেশের অর্থ দেশে আনা। সেই ভাবনা থেকে আমি একটি দেশিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরির কাজ শুরু করি যার নাম দিয়েছি ‘ই—সমাজ’। এটি পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিন আগে চালু করেছিলাম এটাকে মানুষ খুবই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে কারণ এটি বিদেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর চেয়ে আরও বেশি সেবামূলক, ১ দিনে প্রায় ২০ হাজার ব্যবহারকারী যুক্ত হয়েছিল। ‘ই—সমাজ’ অল্পদিনের মধ্যে অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে, এখানে তরুণ সমাজের কর্মসংস্থান গড়ে তুলবো। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চাই, আশাকরি এটি সবাই ব্যবহার করবেন।